দেশভাগের সময় ভারত এবং পাকিস্তানের মানচিত্র কে এবং কিভাবে তৈরি করেন?


কে করেছে সীমান্তের এমন বিভাজন, একসময় সারা পৃথিবী রাজত্ব করেছে ব্রিটিশরা৷ বিভিন্ন দেশে তৈরি করেছিল তাদের উপনিবেশ৷ আর যখনই বাধ্য হয়ে কোন উপনিবেশ ছেরে ছিলেন, তখনই সেই দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে গেছে জাতিগত ও ধর্মীয় ভেদাভেদ৷  শাসনাধীন দেশটিকে এমনভাবে টুকরো টুকরো করে ফেলা যেন সে দেশটিতে সবসময় কলহ-বিবাদ লেগে থাকে যেমন ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ,এবং ভারতের ক্ষেত্রেও তারা এই ফর্মুলাটি প্রয়োগ করেছে ৷1757 থেকে 1947 সাল পর্যন্ত মোট 190 বছর ভারতীয় উপমহাদেশের ওপর শাসন-শোষণ ও কর্তৃত্ব বজায় রাখে ব্রিটিশরা৷ 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তারা তড়িঘড়ি করে ভারতকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ৷সর্বশেষে ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারতীয় উপমহাদেশ কে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রে ভাগ করার দাবি মেনে নেয় ৷তারা সিদ্ধান্ত নেয় ধর্মের ভিত্তিতে অর্থাৎ হিন্দু ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারতকে ভাগ করা হবে৷ এরই পরিপ্রেক্ষিতে 1947 সালের 14 আগস্ট মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান এবং 15 ই আগস্ট প্রথম প্রহরে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে ৷ভারত ও পাকিস্তানের সীমানা ঠিক করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল একজন ব্রিটিশ আইনজীবী রেডকল্পি তারএর আগে যিনি কখনো ভারতে আসেন নি ৷ভারত সম্পর্কে তিনি তেমন কিছু জানতেও না৷  কোন দেশ দূরে থাক পাড়া-মহল্লার সীমান্ত বা মানচিত্র তার জানা ছিলনা তো তিনি দেশের মানচিত্র কি ভাবেভাগ করবেন৷ ভারত ও পাকিস্তানের সীমানা তিনি এসেছিলেন তা আজও উপমহাদেশে বড় উত্তেজনার মূল কারণ হয়ে দারিয়েছে ৷ ভারত ভাগে মানচিত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকটির নাম ছিলেন রেডক্লিপ ৷ যিনি ছিলেন একজন ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড মাউন্টব্যাটেন আদেশে পেয়ে৷ দেশটাকে ভাগ করার জন্য তাকে সময় দেয়া হয় 10দিন এবং 40 হাজার রুপি দিতে চেয়েছিলে ,যা তখনকার দিনে অনেক টাকা, কিন্তু যেটা তাকে আরো বেশি প্রলুব্ধ করেছিল, তা হলো তাঁর  নতুন দেশ তৈরি করা তাঁর মতো একজন পরিচিত লন্ডনী আইনজীবীর পক্ষে রাতারাতি আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করার হাতছানি উপেক্ষা করা কঠিন ছিল ৷এদেশের কাজটা ছিল দুই প্রদেশের মাঝ বরাবর বিভাজন রেখা টেনে দেওয়া নিঃসন্দেহে খুবই জটিল একটি কাজ ছিল৷ তার কয়েকজন পরামর্শক ছিলেন তাকে সহায়তা করতে ৷যারা নিজেরাই প্রতিরোধী মতামত দিতে শুরু করলো তাকে দেওয়া হয় শত বছরের পুরনো মানচিত্র ৷এবং ভুলে ভরা আদমশুমারির তথ্য৷ সঠিকভাবে পূরণের জন্য রেডক্লিপ জেলা মানচিত্র কিন্তু সেরকম কিছুই তখন ছিল না ৷সব সরকারি দপ্তর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে সাধারণ মানচিত্র  থাকতো তাকে সেটাই দেওয়া হয়েছিল৷ আর এসবের ওপর নির্ভর শুধু ধর্মের ভিত্তিতে দুটো সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ রেখা টেনে দেয়ার কাজটা রেডক্লিপ ডে সম্পন্ন করতে হয়েছিল ৷এই অবস্থায় তিনি যে রেখাটি এনেছিলেন ৷তাদের লাহোরকেপাকিস্থানের বাইরে রাখা হয়েছিল ৷তখন তার মনে হয় এটা করা হলেই পাকিস্তানের ভাগে গুরুত্বপূর্ণ শহর পড়বে না ৷এই বিবেচনায় তিনি লাহোর কে পাকিস্তানের অংশ দিয়ে দেয়৷ অন্যদিকে  ভারতের দুই পাশেই বিশাল দুটি প্রদেশ সে সময় তখন এবং মুসলিম জনসংখ্যা ছিল প্রায় সমান সমান পূর্বদিকে বাংলা এবং পশ্চিম দিকে পান্জাব আরো কয়েকটি রাজ্যের ভাগ্য অস্পষ্ট হয়ে যায় ৷উদ্বেগ উত্তেজনা দ্রুত বাড়ছিল নিজেও বুঝতে পারলি না ,যে তিনি হাত দিয়েছেন তিনি প্রখ্যাত ভারতীয় সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার যে পরবর্তীতে বলেন মাউন্টব্যাটেন নিজেই তাকে বলেছিলেন অ্যাসাইন্মেন্টা বেশ কঠিন স্বাধীনতার কয়েকদিন পর রেডক্লিফের মানচিত্র রেডক্লিপ লাইন জনসমক্ষে প্রচার করা হয .যখন প্রকাশিত হয় এই মানচিত্রটি কোটি মানুষ যখন স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত৷ রেডক্লিপ লাইন এর আওতায় কোন দেশ করেছে সেটা অধিকাংশ মানুষ জানতোই না ৷ফলে মানচিত্র  সবাই অবাক বিস্ময় নিয়ে হতবাক হয়েছেন ৷লাখ লাখ মানুষ নতুন দেশের খোঁজে রেডক্লিপ লাইন অতিক্রম করে এসময় ধর্মীয় সহিব 

10 লাখ মানুষ নিহত হয় নিদারুণ বেদনাদায়ক এই ঘটনার পরিণামে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আজও তিক্ততায় ভরা. পাঞ্জাবিও বাঙালিরা থাকে এমন করে চরম ঘৃণা সঙ্গে তিনিও জানতেন এই জনগোষ্ঠী আজীবন তার ওপর রুষ্ট থাকলে নিজেই বলেছিলেন অন্তত 8 কোটি মানুষ আমাকে দেখবে আমাকে যদি দুই বা তিন বছর সময়ে দেয়া হতো আমি কাজটি আরও ভালোভাবে করতে পারতাম এই ভারত ছেড়ে যাওয়ার আগে তার কাজের যাবতীয় দলিলপত্র আগুনে পুড়িয়ে দেয় ৷দেশে ফিরে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে পুরস্কার স্বরূপ নাইট উপাধি লাভ করেন ৷কিন্তু তিনি তার সম্মানই 40 হাজার টাকা নেননি ৷কারণ তিনি মনে করেছিলেন দেশভাগের কারণে যে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল সেটার দায়ভার তার দেশভাগের পর ৷তিনি তাই কখনো আর ভারতে আসেননি তিনি বলেন 8 কোটি মানুষের চরম দুঃখ 

আমাকে খুজবে আমি চাইনা তাদের সঙ্গে আমার দেখা হোক 1977 সালে লন্ডনে এই আইনজীবী ও ভারত বিভাজন কারী মৃত্যুবরণ করেন ৷অর্থ ও খ্যাতির  দুটি দেশ তৈরি করেছিলেন কিন্তু কাজ শেষে সেই অর্থ তিনি নেননি আবার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেনি

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম